ফাইভার থেকে কিভাবে অর্থ উপার্জন করবেন – সম্পূর্ণ গাইডলাইন!

how-to-make-money-from-fiverr

আপনি যদি ফাইভার থেকে কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায় এটা জানেন, তাহলে আপনি ঘরে বসেই ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। ফাইভারের মাধ্যমে আপনার দক্ষতা ব্যবহারে করে আপনি বিশ্বের যে কোন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন এবং সেই সাথে ভালো পরিমানে আর্থ আায়ের সুযোগ তো থাকছেই।

ভ্রমণপ্রিয়, চাকুরীজীবি এবং ডিজিটাল যাযাবরদের মতে, নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত উপার্জন করার জন্য ফাইভার এখটি দুর্দান্ত প্লাটফর্ম। তো, চলুন এখন আমরা ফাইভার থেকে কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়, এর আদ্যপাদ্য দেখে আসি।

আজকের পোস্টে আমি আপনাদের দেখাব যে ফাইভার কি? কিভাবে শুরু হয়? এখানে কীভবে কাজ শুরু করতে হবে? ফাইভারে কি ধরনের কাজ পাওয়া যায়? এবং কিভাবে কাজ করলে খুব সহজেই সফলতা পাওয়া যাবে? এছাড়াও সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং লাভজনক গিগগুলো নিয়ে কথা বলব।

প্রথমেই ফাইভার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিয়ে শুরু করি।

fiverr

ফাইভার কী?

সহজভাবে বলতে গেলে, ফাইভার হলো একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস যা বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা, কাজ ও ছোট জব সরবরাহ করে।

২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ মার্কেটপ্লেসের লক্ষ হচ্ছে এমন একটি অনলাইন প্লাটফর্ম তৈরি করা যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা তাদরে দক্ষতা অনুযায়ী পরিষেবাগুলোর তালিকাভুক্তি ও বিজ্ঞাপন দিতে পারে।

এখনে আপনি প্রতি ধরনের কাজের জন্য দক্ষতা অনুযায়ী লক্ষ লক্ষ গিগ খুঁজে পাবেন। আপনি ওয়েভ ডেবলপার, ডিজাইনার, ডিজিটাল মার্কেটার, আইন জীবি, শিক্ষক অথবা সংগীতশিল্পী যা হোক না কেন, ফাইবারে সব রয়েছে।

ফাইভারে, সেলার কর্তৃক প্রদত্ত পরিষেবা গুলোকে “গিগ” নামে ডাকা হয় এবং এগুলে ৫ ডলার থেকে শুরু হয়। এই ৫ ডলার হলো প্রথমিক দাম। আর এজন্যই এই কোম্পানির নাম ফাইভার। এখনে অন্য প্লাটফর্মের তুলনায় বাজেটের মধ্যে পরিষেবা (সার্ভিস) পাওয়া যায়। যার কারনে ফাইভার খুব জনপ্রিয়।

বিক্রেতাদের সরাসরি ফ্রিল্যান্সারদের সাথে যুক্ত করার মধ্যে দিয়ে অনলাইনে পরিষেবা বিনিময়ের জন্য ফাইভার বর্তমানে একটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস হয়ে উঠেছে।

ফাইভার কিভাবে কাজ করে?

আপনার কি এমন কোন বিশেষ দক্ষতা বা প্রতিভা আছে যা অন্যর দরকার হবে? লোগো ডিজাইন, ওয়েবসাইট তৈরি বা অন্য কোন কাজ যেটা আপনি সবচেয়ে ভালো পারেন। অথবা আপনি সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং বা এইচ. আর. কৌশল ব্যবহার করে ফাইভার থেকে আয় করতে পারেন।

আপনার প্রতিভা যা হোক না কেন, ফাইভার আপনার দক্ষতা অনলাইনের মাধ্যমে পুরো পৃথিবীর সাথে বিনিময় করার সুযোগ দেয়। এবং আপনি যেটা করতে পছন্দ করেন তা করার মধ্যে দিয়ে ফাইভার থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

ফাইভারে কাজ পাওয়ার প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক সহজ। তবে সবার প্রথমে ফাইবারে কাজের সাথে জরিত দুটি ভিন্ন পক্ষ (বায়র এবং সেলার) সম্পর্কে ধারনা থাকা দরকার।

এখন ফাইবার কিভাবে কাজ করে সেটা নিয়ে আলোচনা করব-

সেলারঃ মনে করুন, আপনি একজন ফ্রিলান্সার এবং কাজ খুঁজছেন। এক্ষেত্রে ফাইভারে আপনি একজন সেলার হিসেবে বিবেচিত হবেন। একজন বিক্রিতা হিসেবে আপনি কি পরিমাণ পরিষেবা দিবেন এবং তার বিনিময়ে কতটা অর্থ পেতে চান, তা তালিকাভুক্ত করতে পারেন। কাজ সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা এবং ফাইভার সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে যে আপনি কাজের জন্য বিবেচিত হবেন, নাকি হবেন না।

বায়ারঃ আবার কেউ যদি ফাইভার থেকে কোন পরিষেবা কেনার জন্য খোঁজ করে থাকে, তবে সে হচ্ছে বায়ার। বায়ারের যেকোন কাজ বা পরিষেবা যেমন – কোন প্রোজেক্ট, নির্দিষ্ট কাজ, দরকার হতে পারে এবং বায়ার হতে পারে কোন কোম্পানি, কোন ব্যবসায় জড়িত প্রতিষ্ঠান অথবা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি। ফইভারে, বায়ার তার এই কাজটি সম্পাদন করতে সহায়তা করার জন্য সেলাদের নিয়োগ দেয়।

ফাইভার একটি দ্বি-মুখী যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম, এখনে বায়ার এবং সেলার উভয়ই একে অপরকে খুঁজে পাওয়ার সুবিধা পান। একজন বায়ার তার প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করার জন্য যোগ্য বিক্রেতাদের প্রোফাইলগুলো যাচাই করে দেখতে পারেন। আবার বিক্রেতারা যার অভিজ্ঞতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ গুলো দেখতে পারেন বায়ার রিকোয়েস্ট অপশন থেকে।

একবার যখন বায়ার ও সেলার একে অপরকে খুঁজে পায়, তখন তারা একটা নির্ধারিত কাজের জন্য কতটা সময় এবং দাম এগুলো ঠক করে। তারপরে সবকিছু ফ্রিলান্সারদের উপর নির্ভর করে যে তারা সবচেয়ে ভালো কাজ করে – কাজ, কাজ, কাজ!

এখন আপনি জানেন যে ফাইভার কিভাবে কাজ করে এবং আপনার অভিজ্ঞতাগুলো প্রদর্শন করে কিভাবে ফাইভার থেকে সত্যি অর্থ উপার্জন করবেন সেটা সম্পর্কে ভালোভবে শেখার সময়।

আরও পড়ুন – ফ্রিল্যান্সিং কি?

join fiverr

ফাইভারে কিভাবে কাজ শুরু করবেন?

ফাইবারে সেলার হিসেবে অর্থ উপার্জন আগের থেকে তুলনামূলক সহজ। নিচের পদক্ষেপগুলো ভালোভবে অনুসরণ করুন। আশাকরি খুব অল্পসময়েই ফাইবার থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

নতুন অ্যাকাউন্টের জন্য নিবন্ধন করুনঃ

ফাইভার থেকে অর্থ উপার্জন করার জন্য, প্রথমেই আপনাকে একটা নতুন একাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। নতুন একাউন্ট নিবন্ধন করার জন্য ফাইভার.কম ওয়েবসাইটে গিয়ে সাইন আপ বাটনে ক্লিক করুন এবং আপানার তথ্য দিয়ে সাইন আপ বাটনে ক্লিক করলে আপনার প্রদানকৃত ইমেইল এ ভেরিফাই করার জন্য লিংক পাবেন যেটার উপরে ক্লিক করে আপনার ইমেইল ভেরিফাই করুন। কিভাবে ফাইভারে একাউন্ট খুলতে হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। এখন ফাইভারে একটি একাউন্ট আছে যেটা থেকে অর্থ উপার্জন করতে হলে আরো কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে।

একটি প্রফেশনাল সেলার প্রোফাইল তৈরি করুনঃ

ফাইভারে একাউন্ট তৈরি করার পর কাজ পেতে হলে প্রোফেশনাল সেলার প্রোফাইল তৈরি করতে হবে যেটা আপনার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা বায়ারের (ক্রেতাদের) কাছে তুল ধরবে। অর্থাৎ, আপনার সেলার প্রোফাইল থেকে আপনাকে নিজেকে বিক্রি করতে হবে। বায়াররা কাউকে তাদের কাজে নিয়োগ করার আগে এই প্রোফাইল দেখে প্রাথমিক ধারনা নিয়ে থাকে। এজন্য, একটি প্রফেশনাল সেলার প্রোফাইল তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গিগ তৈরি করুনঃ

এখন আপনার একটি প্রফেশনাল প্রোফাইল আছে। কাজ পাবার জন্য আপনাকে একটি গিগ তৈরি করতে হবে। আপনি কি পরিষেবা দিবেন এবং তার দাম কত হবে তা নির্ধারণ করে গিগ তৈরি করুন। গিগ তৈরি করার সময় সুন্দর একটি গিগ ইমেজ নির্বাচন করুন যা দেখে বায়াররা আকৃষ্ট হবে।

ফাইভারে আপনার গিগ হচ্ছে এক প্রকার কাজের বিবরণ যেটার মাধ্যমে ক্রেতারা বিবেচনা করবে যে আপনি আসলেই তার কাজ করার জন্য যোগ্য কিনা।

বায়ার রিকোয়েস্ট প্রেরন করুনঃ

ফাইভারে প্রথমে কাজ পাওয়ার সহজ উপায় হচ্ছে নিয়মিত বায়ার রিকোয়েস্ট দেয়া। প্রতিদিন হাজার হাজর বায়ার তাদের কাজের জন্য পোস্ট করে যেখান থেকে আপনি যে কাজটি পারেন সেটার জন্য বায়ারকে অফার দিতে পারেন। যদি আপনার অফার বায়ারের কাছে ভালো লাগে তাহলে তার কজটির জন্য আপনাকে নিয়োগ করতে পারে। প্রতিদিন একজন সেলার ১০ টি করে বায়ার রিকোয়েস্ট সেন্ড করতে পারবে। কিভাবে প্রফেশনাল বায়ার রিকোয়েস্ট সেন্ড করবেন? এখনে ক্লিক করুন।

ফাইভারে কত খরচ হয়?

ফাইভার দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এটি ওয়েবসাইটের অন্যতম সেরা বৈশিষ্ট্য। কোন গিগগুলি ব্রাউজ করতে বা দেখতে কোনও টাকার দরকার হয় না।

তবে বায়ার হিসেবে, যখন আপনি ফাইভার থেকে কিছু কিনবেন তখন আপনাকে প্রশাসনিক ফি বাবদ অগ্রিম ফি প্রদান করতে হবে এবং এটা নির্ভর করবে আপনি কত ডলারের অর্ডার করেছেন তার উপরে। ৪০ ডলারের কম কোন গিগের জন্য ফি হচ্ছে ২ ডলার এবং এর উপরে অর্ডারকৃত গিগের ৫% সার্ভিস ফি।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি একটি লোগো তৈরি করার জন্য ১০ ডলার দিতে ইচ্ছুক হন তবে আপনি একজন বিক্রেতার নিয়োগ করার আগে ফাইভারকে কে ২ ডলার দিতে হবে।

আবার একজন বিক্রেতা হিসেবে, কাজ সফলভাবে শেষ করার পরে ফাইভার আপনাকে অর্থ প্রধান করবে। তবে ফাইভার আপনার কাছ থেকে ২০% রেখে আপনাকে ৮০% দিবে। অর্থাৎ আপনি যদি লোগো তৈরি করার জন্য ১০ ডলারে কাজ করে থাকেন, কাজ শেষ হওয়ার পর আপনি ৮ ডলার পাবেন।

দেখুন- স্ন্যাপচ্যাট থেকে কিভাবে আয় করবেন?

make money on fiverr

ফাইবারে থেকে কীভাবে অর্থোপার্জন করবেন: সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০ টি কাজঃ

শুরুতেই বলেছি যে ফাইভারে প্রতিটি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার জন্য কাজ রয়েছে। আসলে এই মার্কেটপ্লেসে ২০০ টিরও বেশি বিভিন্ন কাজের বিভাগ আছে। এখন আমরা সবচেয়ে জন্যপ্রিয় ১০ টি কাজের সম্পর্কে আলোচনা করব। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ুন।

১. ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্টঃ

পেমেন্টঃ প্রতি গিগ ১০০ ডলার থেকে ২০০০ ডলার!

ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে ফাইভারে তাৎক্ষণিকভাবে সর্বাধিক বেতনের কাজ।
যদিও আপনি ওয়েবসাইট ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট এর জন্য আলাদা আলাদ কাজ খুজে পাবেন। তবে আপনি যদি দুটোই পারেন, তাহলে আপনি আরোও অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

তবে ই-কমার্স ওয়েবসাইট ডিজাইনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বায়াররা এমন সব সেলারদের খোঁজে করেন যারা ওয়ার্ডপ্রেস, স্কোয়ারস্পেস এবং শপাইফের মতো প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করে ওয়েভসাইট তৈরি করতে পারেন।

২. গ্রাফিক ডিজাইনঃ

পেমেন্ট: প্রতি গিগ ১০  – ১০০০ ডলার!

ফাইাভরে সবচেয়ে বেশি কাজ হচ্ছে গ্রাফিক ডিজাইন। গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে ১১,০০০ এর বেশি গিগ আছে বর্তমানে এই বিশাল মার্কেটপ্লেসে।

আপনি টি-শার্ট, লোগো বা বিজনেস কার্ড ডিজাইন যাই পারেন না কেন , ফাইভারে গ্রাফিক ডিজাইন বিভগে গিগ তৈরি করে কাজ পেতে আপনার সমস্যা হওয়া উচিত নয়।

৩. কপিরাইটিংঃ

পেমেন্ট: প্রতি গিগ ৫০ – ২০০০ ডলার!

ফাইভার থেকে অর্থোপার্জনের জন্য আপনাকে টেক স্পেশালিস্ট হতে হবে না! আপনি যদি একজন ভালো শব্দবিদ হন তাহলে আপনি ক্রেতাদের কাছে আপনার লেখার কপি সরবরাহ করে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

ফাইভারে কপিরাইটিং এর উপর অসংখ্য গিগ আছে। কপিরাইটিং এর মধ্যে পোডাক্ট রিভিউ, ব্লগের জন্য নিবন্ধ এবং বই লেখার মত কাজ গুলো সবচেয়ে জন্যপ্রিয়।

৪. ভিডিও মার্কেটিংঃ

পেমেন্ট: গিগ প্রতি ১০০ – ১০,০০০ ডলার!

আপনি যদি একজন ভালো মানের ভিডিও নির্মাতা হন, তাহলে ফাইভার আপনাকে খুঁজছে। ভিডিও মার্কেটিং ফাইভারে সর্বাধিক অর্থ উপার্জনকারী কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রকৃতপক্ষে, এই ধরনের পরিষেবার চাহিদা গত কয়েক বছরে ১০০% এর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরো দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাবে।

ভিডিও মার্কেটিং এর মধ্যে ট্রেইনিং ভিডিও, অ্যানিমেশন ভিডিও, ছোট বিজ্ঞাপন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের ব্যবসার প্রসার বাড়ানোর জন্য সামাজিক মাধ্যমগুলো যেমন – ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি ভিডিও দিয়ে থাকে। আপনার যদি এ বিষয়ে আগ্রহ থাকে, তাহলে আপনিও আয় করতে পারেন মোটা অঙ্কের টাকা।

৫. অনুবাদঃ

পেমেন্টঃ গিগ প্রতি ১০০ থেকে ১০০০ ডলার!

আপনি যদি একাধিক ভাষায় কথা বলতে পারেন, তাহলে অন্যের লেখা অনুবাদ করে ফাইভার থেকে আয় করতে পারেন। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের বিভিন্ন নদি ও নিবন্ধগুলো অন্য ভাষায় রুপান্তর করার জন্য বহুভাষী সেলারদের আগ্রহের সাথে খোঁজ করছে।

একইভাবে, আপনি ফাইভারে অসংখ্য বায়ার পাবেন যারা অন্য ভাষা শেখার জন্য বিক্রেতাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। আপনার যদি শিখানোর মতো ধৈর্য থাকে, তাহলে আপনি আপনার এই দক্ষতা ব্যবহার করে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারেন। প্রইভেট ভাষা শিক্ষকের জন্য প্রচুর আগ্রহী শিক্ষার্থী আছে।

৬. সোশাল মিডিয়া মার্কেটিংঃ

পেমেন্টঃ গিগ প্রতি ৫০ – ২০০০ ডলার!

কৌশলগত সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং এর চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনার অভিজ্ঞতা দিয়ে আপনি ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়গুলির সাথে আপনার দক্ষতা ভাগ করে অনেক উপার্জন করতে পারেন।

ক্রেতারা বিজ্ঞাপন তৈরি, প্রচার এবং অপটিমাইজেশন করার জন্য দক্ষ বিক্রেতাদের সন্ধান করছে। এমনটি কখনো কখনো তাদের জন্য সোশাল একাউন্ট পরিচালনা করারও প্রয়োজন হতে পারে।

৭. ইনফ্লুয়েন্স্যার মার্কেটিংঃ

পেমেন্টঃ গিগ প্রতি ১০ – ১০০০ ডলার!

আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে বেশ সংখ্যক ফলোয়ার থাকে, তাহলে আপনি অল্প চেষ্টায় নগদ টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে তাদের ব্র্যান্ড প্রচার করার জন্য আপনাকে অর্থ প্রদানে আগ্রহী।

তবে কত দাম তা নির্ভর করবে আপনার প্রোফাইলের ফলোয়ার সংখ্যার উপর।

৮. ভয়েস ওভারঃ

পেমেন্টঃ গিগ প্রতি – ১০ থেকে ৫০০ ডলার!

ফাইভারে চাহিদাসম্পন্ন কাজগুলোর মধ্যে ভয়েস ওভার অন্যতম। এ কাজের জন্য খুব বেশি অভিজ্ঞতা দরকার হয় না, দরকার শুধুমাত্র ভালো কথাবলার অভিজ্ঞতা।

বিশ্বাস না হলে আপনি ফাইভারে ভয়েস ওভার লিখে সার্স করুন, অসংখ্য গিগ পাবেন। আমেরিকান উচ্চারণ, ব্রিটিশ উচ্চারণ, পুরষ, মহিলা কন্ঠ, যাই হোক না কেন, আপনি আপনার গিগ দিয়ে উপার্জন শুরু করুন।

৯. ইলাস্ট্রেশনঃ

পেমেন্টঃ গিগ প্রতি – ১০ থেকে ৩০০ ডলার!

আপনি যদি কমিকস অথবা কার্টুন আঁকায় পারদর্শী হন, তাহলে ফাইভার আপনার জন্য অর্থ উপার্জনের অন্যতম জায়গা। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পন্যের বিপণনের জন্য অনন্য চরিত্র, কার্টুন, পোর্টরেইট খুঁজে।

আপনি যদি সত্যিই ইলাস্ট্রেশন ভালো হন, তাহলে ফাইভারে ইলাস্ট্রেশন নিয়ে গিগ প্রকাশ করুন এবং আপনার কাজ দিয়ে অর্থ উপার্জন করুন।

virtual-assistant

১০. ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্টঃ

পেমেন্টঃ গিগ প্রতি ৫ থেকে ১০০ ডলার!

একজন ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট বিশ্বের যেকোনো যায়গা থাকে কাজ করতে পারে। আপনি সংগঠিত থাকতে এবং একাধিক সময়সূচী পরিচালনা করায় দক্ষ হন তাহলে ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার আপনার জন্য ভালো বিকল্প হতে পারে।

ফাইভারে ভার্চুয়ার এসিস্ট্যান্ট সম্পর্কিত কাজের অন্তহীন সরবরাহ আছে। কাজগুলোর মধ্যে ডেটা এন্টি, অ্যাপয়েন্টমেন্ট সেটিং, কোল্ড কলিং ইত্যাদি জনপ্রিয়।

কিাভবে ফাইভারে বেশি কাজ পাবেন?

অনলাইনে চাকরী এবং পরিষেবাগুলি সন্ধানের জন্য ফাইভার একটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস। এ কারণে, প্রতিদিন অসংখ্য নতুন ফ্রিলান্সার ফাইভারে একাউন্ট খুলে কাজ খুঁজছে। যার ফলে দিন দিন প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই বিশাল প্রতিযোগিতার মধ্য থেকে কাজ পেতে হলে আপনাকে কিছু টিপস ফলো করতে হবে যা আপনাকে অন্য ফ্রিল্যান্সারদের থেকে আলাদা করবে এবং কাজ পেতে সহায়তা করবে।

১. একটি ভালো মানের প্রোফাইল তৈরি করাঃ

কথায় আছে, আগে দর্শনদারী, পরে গুনবিচারী। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, একটা সুন্দর এবং বর্ণনামূলক প্রোফাইল কাজ পেতে অনেক বেশি সহায়তা করে। বায়ার প্রথমেই আপনার প্রোফাইল দেখে সিদ্ধান্ত নিবে যে আপনি আসলেই কাজের জন্য উপযুক্ত কিনা। তাই একটি ভালো প্রোফাইল কাজ না পাওয়া ও পাওয়ার প্রথম ধাপ।

আপনার ফাইবার প্রোফাইলটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোার জন্য ব্যক্তিগত ভিডিও আপলোড করার কথা ভাবতে পারেন। এটা কেবল আপনার দক্ষতা এবং প্রচেষ্টা প্রকাশ করবে না বরং বায়ারকে আপনার সম্পর্কে জানতে সহায়তা করবে৷ একটা জরিপ অনুসারে, ভিডিও যুক্ত করার গিগ গুলোর বিক্রি ২০০% বেশি।

২. গিগ এসইওঃ

হাজার হাজার গিগের মধ্যে আপনার গিগকে প্রথমে নিয়ে আসার জন্য আপনার গিগকে এসইও করতে হবে। এখানে এসইও বলতে সাধারণ এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনকে বোঝানে হয়নি। ফাইভার নিজেই একটি সার্চ ইঞ্জিন এবং এর নিজস্ব এলগরিদম আছে। গিগ এসইও করার জন্য নিচের টিপসগুলো ফলো করুনঃ

গিগের টাইটেল বা শিরোনাম আপনার কাজের সাথে মিল রাখুন এবং আকর্ষণীয় রাখুন। যেমনঃ
“i will design attractive logo for your company” এটা দেখতে এবং পড়তে ভালো লাগে ” design, logo, company” এটার থেকে।

অন্য টিপটি হলো গিগের ডেসক্রিপশনে বার বার কীওয়ার্ডগুলি ব্যবহার করা। ধরুন আপনার গিগের টাইটেল “i will design attractive logo for your company” এখনে কীওয়ার্ড হতে পারে “design attractive logo” যেটা ডেসক্রিপশনে বার বার ব্যবহার করুন। যার ফলে যারা এই কীওয়ার্ড লিখে যখন কেউ সার্স করবে আপনার গিগটি প্রথম পাতায় দেখাবে।

আরো পড়ুন – কিভাবে আপনার গিগকে প্রথম পেজে নিয়ে আসবেন?

৩. ফাইবার অ্যাপ ব্যবহার করুনঃ

আপনি যদি রাস্তায় থাকেন তবে আপনার কাছে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের অবিচ্ছিন্ন অ্যাক্সেস নাও থাকতে পারে। এক্ষেত্রে ফাইভার অ্যাপ ব্যবহার করে ক্লায়েন্টদের সাথে মেসেজ করা সহ অনেক কাজ করতে পারবেন।

সময়মত বায়ারের মেসেজর উত্তর দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ সময় বায়ার একাধিক সেলার দের মেসেজ দেয় একই কাজের জন্য এবং যে তারাতাড়ি উত্তর দেয় তার কাজটি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর সেরা কাস্টমার সার্ভিস আপনাকে ভালো রেটিং পেতে এবং এটি আপনার ক্রেতাদের শীর্ষে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহক পরিষেবা ফাইভারে আপনার রেটিং এবং সাফল্যের স্কোর বাড়াতে সহায়তা করবে।

৪. লেভেল আপঃ

ফাইভারে একজন বিক্রেতা হিসেবে তিনটি লেবেল আছে। নতুন অবস্থায় নিও সেলার, এর পরে লেবেল ১, ২ এবং টপ রেটেট সেলার। প্রতিটি লেবেলে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আছে যা আপনাকে বেশি কাজ পেতে সহায়তা করবে।

ফাইভারে আপনার লেভেল বাড়ানোর জন্য, ভালো রেটিং, রেসপন্স রেট, সময়মত কাজ ডেলিভারি এবং ভালো কাজ বজায় রাখতে হবে।

ফাইভারের সুবিধা এবং অসুবিধাঃ

আপনার নখদর্পণে ফ্রিল্যান্স কাজের একটি বিশাল জগৎ থাকলেও ফাইভারের এর কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। সুতরাং আমরা ফাইভার থেকে কিভাবে অর্থ উপার্জন করতে পারি এবং তা আপনার পক্ষে কার্যকী কিনা তা দেখার জন্য আরো একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

সুবিধাঃ

ফাইভারে কাজ করার সুবিধাঃ

  • স্বাধীনতাঃ বেশিরভাগ ফ্রিলান্স কাজগুলল একটি নির্দিষ্ট মাথারা স্বাধীনতার সাথে জরিত, তববে ফাইভার এটিকল একটা নতুন স্তরে নিয়ে গেছে। ফাইভারে গিগ গুলো যেহেতু আপনি নিজেই তৈরি করবেন, আপনি নিজের সময় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী গিগের সময় এবং কাজের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিতে পারেন। অর্থাৎ, আপনি কখন কাজ করবেন তা নির্ভর করে আপনার নিজের সিদ্ধান্তের উপর। সুতরাং, আপনি আপনার গতিতে কাজ করতে পারবেন।
  •  অর্থ প্রদানের নিশ্চিয়তাঃ যেহেতু ফাইভারে সমস্ত বায়ারকে কোন গিগ ক্রয়ের পূর্বে অর্থ প্রদান করতে হয়, এজন্য আপনি নিশ্চিন্তভাবে কাজ করতে পারেন। কাজ শেষ হলে আপনার অর্থ আপনি পেয়ে যাবেন। ছদ্মবেশী ব্যক্তি বা যাচাই করা ব্যবসায়ের সাথে কাজ করার জন্য আপনাকে চিন্তা করার দরকার নেই।অর্থ প্রদানের নিশ্চয়তা: যেহেতু সমস্ত ক্রেতাকে আগেই অর্থ প্রদান করতে হবে, আপনার কাজের জন্য আপনাকে প্রদানের 100% গ্যারান্টিযুক্ত। ছদ্মবেশী ব্যক্তি বা যাচাই না করা ব্যবসায়ের সাথে কাজ করার জন্য আপনাকে চিন্তা করার দরকার নেই।
  •  টিপস উপার্জনের সম্ভাবনাঃ ফাইভার তাদের ক্রেতাদের কাজ কমপ্লিট হওয়ার পরে টিপস দিতে পরামর্শ দেয়। আমার জানামতে কাজ পছন্দ হলে অধিকাংশ ক্লায়েন্ট টিপ দেয়।
  • নতুনদের জন্য ভালঃ যেহেতু ফাইভারে ছোট্ট এবং কম অভিজ্ঞতার কাজগুলি করার সুযোগ রয়েছে, তাই খুব সহজেই নতুনরা এসে এখানে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। তবে আপনি এসব সহজ কাজ থেকে প্রত্যাশিত উপার্জন নাও করতে পারেন তবে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে ফাইভারে আপনার উপার্জন বাড়ার অপার সুসোগ রয়েছে।
  • বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের কাজ করার সুযোগঃ ফাইভারে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতে হবে। এর মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন মানুষের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন যা পরিবর্তি সময়ে আপনাকে দুর্দান্ত করে তুলবে। পরিশেষে আপনার নেটওয়ার্কিং দক্ষতায় সহায়ক হবে।

অসুবিধাঃ

  • কমিশনঃ যদিও কোন চাকরি বা পরিষেবার বিনিময়ে ফি কাটটা স্বাভাবিক, তবে এক্ষেত্রে ফাইভারের ২০% কমিশন খুবই অতিরিক্ত মনে হয়। আরো লক্ষনীয় বিষয় যে ফাইবার বায়ারের দেয়া টিপস থেকেও ২০% কেটে নেয় কমিশন হিসেবে।
  • উচ্চ প্রতিযোগিতাঃ যেহেতু ফাইভার কম মূল্যে গিগ সরবরাহ করার জন্য পরিচিত। তাই কোন ক্লায়েন্ট যদি একটা ভালো মানের সার্ভিস জন্য গিগ সন্ধান করে যে অসংখ্য গিগ পেয়ে যাবে যারা মাত্র ৫ ডলারের বিনিময়ে কাজটি করতে ইচ্ছুক। এজন্য বেশি পরিমাণে আয় করার জন্য আপনাকে নিজের দক্ষতার যথেষ্ট প্রমান দিতে হবে।

ফাইভার থেকে অর্থোপার্জন শুরু করার জন্য আপনি প্রস্তুত তো?

আপনি এখন জানেন যে, অতিরিক্ত নগদ উপার্জন শুরু করার জন্য ফাইভার একটি দুর্দান্ত প্লাটফর্ম। সঠিক দক্ষতা, ডেডিকেশন এবং একটি ইতিবাচক কাজের সাহায্যে আপনি সহজেই ফাইভারে গিগ তৈরি করতে পারেন যা আপনার প্রতিভা এবং জীবনযাত্রার সাথে মানানসই।

একবার আপনি আপনার পরিচিতি তৈরি করার পরে, আপনি দেখতে পাবেন যে ফাইভার পরিষেবাগুলি অন্যান্য ফ্রিল্যান্স জব ওয়েবসাইটগুলির মতো একই অর্থ প্রদান করে।

আপনি কোন কাজের জন্য উপযুক্ত তা খুঁজে বের করুন। ফাইভারে আপনার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী প্রোফাইল এবং গিগ তৈরি করুন। আশা করি আপানি ফাইভার থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। আমরা এই পোস্টে ফাইভার সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনাদের একটু হলেও উপকারে আসবে। আপনার মতামত আমাদের কাছে অতি মূল্যবান। মন্তব্য সেকশনে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

[…] আরো পড়ুনঃ ফাইভার থেকে টাকা আয় করার সহজ উপায়! […]